ফলের চারা কলম রোপন ও পরিচর্যা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

বর্ষাকাল অর্থাৎ মে- জুলাই মাস চারা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় । কারণ চারা লাগানোর পর এ সময় সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বর্ষা বেশি হলে বর্ষার পরও চারা লাগানো যেতে পারে। মেঘলা দিনে বা বিকেলের দিকে চারা লাগানো ভালো । নার্সারি হতে চারা সংগ্রহ করে লাগাতে দেরি হলে ছায়ায় রেখে দেওয়া যেতে পারে ।

রোপণের জন্য চারা/কলমের বৈশিষ্ট্য

সতেজ চারা থেকেই সব সময় সবল ও পর্যাপ্ত ফলনের আশা করা যায় । কখনই দুর্বল, রোগাক্রান্ত চারা ভালো শেকড় গঠনের জন্য নির্বাচন করা উচিত নয় । কলম থেকে চারা বা বীজ থেকে চারা তৈরি করার পর দু' এক বছর নার্সারিতে পালন করা দরকার । নার্সারি থেকে তোলা চারা বেশ সবল ও দু তিন বছরের পুরানো হওয়া দরকার । চারা গাছ মূল জমিতে বসানোর আগে গাছের দূরত্ব ঠিক রাখা দরকার । যাতে গাছ বড় হয়ে পরস্পর লেগে না যায় । যে গাছ বড় হয়ে পাশে যতটা জায়গা দখল করে বিস্তার লাভ করে সেই গাছের জন্য ততটুকু জায়গা বা দূরত্ব রাখা প্রয়োজন । গাছের আকৃতি বা মাপ অনুযায়ী চারা বসানোর গর্তের মাপও বড় বা ছাট হবে।

রোপণের জন্য চারা/কলম নির্বাচনের সময় নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে । 

১। নির্বাচিত চারা/কলম সুস্থ, সবল ও সতেজ হতে হবে 

২। চারা/কলম রোগ ও পোকার আক্রমণ মুক্ত হতে হবে । 

৩ । চারাটি/কলমটি স্বাভাবিক আকৃতির হতে হবে । 

৪ । চারা/কলমের কাণ্ড সোজা ও পাতা স্বাভাবিক সবুজ হতে হবে । 

৫। চারার/কলমের গোড়া সুঠাম হওয়া উচিত । 

৬। নার্সারি হতে সংগ্রহীত চারা দুই/তিন বছরের পুরনো হওয়া দরকার । 

৭ । চারার শিকড় দুর্বল হলে ছায়ায় ২/১ বছর পালন করে শিকড় শক্ত করে নিতে হবে । 

৮। নির্বাচিত স্থানের মাটির গুণাগুণ অনুসারে চারার প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে । যেমন- রাজশাহীতে আম, লিচু, সিলেটে কমলালেবু, আনারস ইত্যাদি । 

৯ । চারার গোড়ার মাটি ও মুল ভেজা থাকবে এবং প্রধান শিকড় অঞ্চল থাকবে । 

১০ । নির্বাচিত স্থানটি ছায়াযুক্ত হলে ছায়া সহ্যশীল চারা নির্বাচন করতে হবে । 

১১। চারার কাণ্ড সোজা হতে হবে এবং চারা কলম খুব বেশি বয়সের হবে না ।

বীজ তলা থেকে চারা/কলম উঠানো এবং কষ্ট সহিষ্ণুতা বাড়ানোর জন্য করণীয় বিষয়গুলো

বীজতলা হতে চারা উত্তোলনের জন্য অন্তত একমাস পূর্বে চারাকে সতর্ক করে নিতে হবে। যাতে চারাটি লাগানোর জন্য উঠানোর ঝুঁকি সহ্য করতে পারে। প্রথমে যে চারাটি ভুলতে হবে তার পাড়ার চারদিকে কতদূর পর্যন্ত এবং কি পরিমান মাটিসহ বল আকারে ভালো হবে তা আগেই চিহ্নিত করতে হবে। এরপর চিহ্নের চারদিকে না খুড়ে চারার বা বেশি চারা লাইনে থাকলে, লাইনের কেবল একদিকে অর্ধবৃত্তাকার ভাবে খুড়ে বা চারার অবস্থাভেদে দূরত্ব কম বেশি করে প্রধান শিকড়ের সাথে খাড়াভাবে গর্ত করতে হবে। এই গর্তটি সাধারনত চারার পোড়া হতে ১০ সেঃমিঃ দূর দিয়ে ৩০ সে:মি: গভীর পর্যন্ত হতে পারে। গর্তটি যথেষ্ট নিচে গেলে চারার প্রধান মূলটি পাশ দিয়ে খুড়ে বের করে কেটে দিতে হবে।

প্রধান মূল কাটার এ পদ্ধতিকে চারা খাসি করন বলে। যে স্থানে মুলটি কাটা হবে সেখানে সাধারণত ২.৫৪ সেঃমিঃ পরিমাণ কেটে সরিয়ে দিতে হবে। অতঃপর পতটি ঝুরে ঝুরে মাটি দিয়ে হালকাভাবে ভরাট করে দিতে হবে ।চারার প্রধান মূল কেটে সর্তকীকরনের পর প্রায় তিন সপ্তাহ কাল অপেক্ষা করতে হবে । এর মধ্যে মূলের কাটাস্থানের চারদিকে অনেক গুলো শিকড় পচ্ছাবে। চারা উঠানোর সময় চিহ্নিত স্থান বরাবর পূর্বে যেদিকে গর্ভ খুঁড়া হয়েছিল তার বিপরবীতে দিকে অনুরুপ ভাবে অর্ধবৃত্তাকার ভাবে পর্ত খুঁড়তে হবে । এভাবে দ্বিতীয়বার পত খুঁড়ার পর খুপরি বা অগারের সাহায্যে মাটির বলসহ চারা অনায়াসেই উঠানো যাবে। চারা বড় হলে মাটির বলের আকার বড় হবে এবং চারা ছোট হলে মাটির বলের আকার ছোট হবে। আবার বড় চারা বেশি দূরে নিতে হলে মাটির বলের আকার যতদূর সম্ভব ছোট করতে হবে। চারার প্রধান শিকড় পাছের বৈশিষ্ট্য এবং পাশে শিকড়ের বিস্তৃতির ওপর নির্ভর করেও বলের আকার ছোট বড় করতে হবে । সাধারনত বৃক্ষ জাতীর গাছের ২ থেকে ৩ বছরের চারার জন্য ২৫ থেকে ৩০ সে:মি: ব্যাস বিশিষ্ট এবং ২০ থেকে ২৫ সে:মি: গভীর মাটির বলই যথেষ্ট ।

যে সব চারার শিকড় খোলা বা পোড়ায় মাটি থাকবে না সেগুলো উঠানোর আগে কোদাল বা খুরপি দিয়ে মাটি আলগা করে নিতে হবে। এরপর সাবধানে চারা টান দিয়ে উঠাতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে চারার গোড়ার ছোট শিকড় গুলো যেন ছিড়ে না যায় বা নাড়া চাড়ায় লোমশ শিকড়গুলো শুকায়ে না যায় । ছেটি এবং লোমন শিকড় গুলোকে রক্ষা করতে হলে কাদামাটি দিয়ে শিকড় আবৃত করে দেওয়া যেতে পারে চারা দুরে স্থানান্তর করা হলে চারাগুলোকে ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে এবং খড়কুটা দিয়ে পোড়া ঢেকে হালকা সেচ দিতে হবে।

চারা উঠানো বা স্থানান্তরের সময় কোন শিকড় ভেঙ্গে বা দুমড়ে মুচড়ে গেলে তা কেটে দিতে হয়। চারার শিকড় যদি পাকানো বা কুণ্ডলী আকারে থাকে তাহলে কিছু কিছু শিকড় ছেটে দিয়ে লাগাতে হয়। অন্যথায় চারা লাগানোর পর মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চারার কুণ্ডলী পাকানো শিকড় কেটে দেওয়া চারা লাগাতে দেরি হলে বা চারা দূরে স্থানাস্তর করতে হলে কতগুলো বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন চারার গোড়ার মাটির বল কলার শুকনো খালে, খড়, নাড়া, নারিকেলের শুকনো পাতা বা চট দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। এমনকি শুকনো ঘাস জড়িয়েও বেধে দেওয়া যাবে। এতে চারার গোড়ার মাটির বল ভাঙার কোন সম্ভাবনা থাকে না এবং চারা বেশিদিন ধরে রাখা যায়। 

চারা/করম রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

প্রথমে চারা রোপণের জন্য স্থান চিহ্নিত করে নিতে হবে। তারপর চিহ্নিত স্থানে গর্ত করে সার মিশানো মাটি দিয়ে ভরাট করে প্রায় দু সপ্তাহ রেখে দিয়ে চারা লাগাতে হবে। পর্বের স্থানটি শনাক্ত করার সুবিধার্থে রোপণ তক্ষা/পান্টিং মার্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ তক্তার মাঝখানে ১টি এবং দু মাথায় ২টি ছিদ্র থাকে । গত তৈরির পূর্বে তার মাঝের ফুটোতে চারার স্থান নির্দেশক খুটি ঢুকায়ে তক্তা মাটিতে বসাতে হবে। এরপর তার দু মাধায় ছিদ্রে ২টি খুঁটি ঢুকিয়ে তা উঠায়ে মাঝখানের খুটির স্থানে গর্ত খোড়া যায়। চারা লাগানোর সময় খুটি দুটো তার দুপাশের ছিদ্র দিয়ে ঢুকালে মাঝখানের ফুটো দিয়ে চারার চিহ্নিত স্থান পাওয়া যাবে ।

চারা পর্কে রোপণের সময় সার মিশ্রিত মাটি গর্তে আগে থেকে যা ভরাট করে রাখা ছিল তা আলগা করে নিতে হবে। এরপর চারার শিকড় যতটুকু পাশে এবং গভীর বিস্তৃত ছিল পর্কে ততখানি বিস্তৃত ও গভীর দিয়ে আস্তে আস্তে ঝুর ঝুর মাটি চাপা দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চারার গোড়া পূর্বে যতটুকু মাটির গভীরে ছিল এখানেও যেন ততটুকু গভীরে থাকে। চারা গর্ভে লাগানোর সময় কোন শিকড় উপরের দিকে উল্টায়ে থাকলে চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। লাগানো চারার গোড়ার মাটি চারিপাশ থেকে সামান্য উঁচু করে দিতে হয় ।

কেনান চারার গাড়া নিচু হলে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হতে পারে, যা ক্ষতিকর। আবার লাগানো চারার গোড়ার মাটির ভালভাবে চেপে না দিলে বৃষ্টির । পানিতে চারার গোড়া নিচু হয়ে যেতে পারে। ঝড়ে বা অন্য কোন কারণে চারা নড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে খুঁটি পুতে চারা বেঁধে দিতে হবে ।

চারা লাগানো পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত চারার যত্ন নিতে হবে। তাতে চারা তাড়াতাড়ি মাটিতে সহজে লেগে যেতে পারে । চারা লাগানো পর পরই প্রথম কিছুদিন ঝাঁঝরি দিয়ে চারার পোড়ায় হালকাভাবে সেচ দেয়া উচিত । লাগানো চারা নতুন অবস্থায় মাটি হতে রস শোষণ করে তার পাতার সাহায্যে যে বাস্পীভবন হয় তা সমতা রক্ষা করতে পারে । আর তাই পাতার সাহায্যে বাষ্পীভবনের চেয়ে রস শাষেন কম হলে চারা ঝিমিয়ে পড়ে । এমনকি পাতার বাষ্পীভবন হার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে চারা মারা যেতে পারে। বাষ্পীভবন নিয়ন্ত্রণের জন্য চারার উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা এবং গোড়ার মাটি শুকনো খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে । এছাড়া পাতা কেটে কিছু কিছু ডাল ছেটে দিয়েও বাষ্পীভবনের হার কমানো যেতে পারে।

চির সবুজ (আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি) জাতীর গাছের চারা লাগানোর সময় প্রধান কাজ ছাড়া অন্যান্য ডাল পালা ও পাতা ছেটে দেয়া যায় । তবে ডালপালা ছাঁটার সময় ফল জাতীয় পাছের আকৃতিও বিবেচনা করতে হয়। চির সবুজ (আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি) জাতীয় পাছের চারা লাগানোর সময় প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্যান্য ডালপালা ও পাতা হেঁটে দেয়া যায়। তবে ডালপালা ছাটার সময় ফল জাতীয় গাছের আকৃতি ও বিবেচনা করতে হয়। রোপণের জন্য নির্বাচিত চারার শুধু একটি প্রধান কাঞ্চ রেখে অনেক সময় অন্যান্য ডাল পালা হেঁটে দেওয়া যেতে পারে। ফল সংগ্রহের সুবিধার জন্য ভূ-পৃষ্ঠ হতে অন্তত ৪৫ সে:মি: বা তার চেয়ে উপরে প্রধান কাজ কেটে দিতে হবে। প্রধান কাণ্ড বেশি লম্বা হলে সূর্যের ভাগে পুড়ে যেতে পারে। এ ধরনের কাওকে সূর্য পোড়া হতে রক্ষার জন্য কাগজ বা খড় কুটা দ্বারা জড়ায়ে বেঁধে দিতে হবে ।

অথবা চুনের গোলা দিয়ে লেপ দিতে হবে । খড়কুটার চেয়ে চুনের গোলা ব্যবহার করা উত্তম । কেননা খড়কুটায় উই পোকার আক্রমণ হতে পারে। চারা রোপণের অব্যবহিত পরে কয়েকদিন চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি দেওয়া উচিত। চারার গোড়ার শুকনা খড় দিয়ে ঢেকে দিলে রস সংরক্ষণ হয় এবং উপরে ছায়ার ব্যবস্থা করলে উপকার হয়। চির সবুজ জাতীয় গাছের চাইতে পাতা ঝরা (বেল, আফা, শরিফা, আমড়া ইত্যাদি) জাতীয় পাছের চারা উঠানোর পর দেরিতে লাগালেও তেমন অসুবিধা হয় না।

চারার গোড়ার মাটি যাতে শক্ত হতে না পারে সে জন্য মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে আলগা করে ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। চারার গোড়ার চারিদিকে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয়। বিশেষ করে অগভীর মূলবিশিষ্ট চারার জন্য এক মৌসুমে ঘন ঘন পানি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়।

নারিকেল গাছের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। পানি সেচের তেমন সুযোগ না থাকলে চারার পাড়ার মাটি মালটিং করে শুকনো ঘাস বা খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । ভাতে অনেকদিন ধরে মাটিতে রস সংরক্ষণ হবে।

কলমের চারায় অনেক সময় নতুন অবস্থায় ফুল আসে, চারার গোড়া হতে নতুন ডালপালা গজায়। গাছের প্রকৃতি বুঝে ডালপালা ছেটে দিতে হয়। নতুন অবস্থায় চারাগাছে ফুল আসলে পাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এসময় ফুল ভেঙে দিতে হয়। দুই তিন বছর পর্যন্ত চারার কলমের ফল ভেঙে দিতে হয়।

চারা লাগানোর সাথে সাথেই চারার সমান্তরাল করে পাশই একটি খুঁটি পুঁতে রশি দিয়ে চারাটি বেঁধে দিতে হবে । এর ফলে ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টিপাত বা গরু ছাপলের ধাক্কায় চারাটি কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না ।

পাছে সার প্রয়োগ করা যায়। সার দেয়ার পর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। গর্ভ বা নালা করা হলে তা সারমিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। সার দেয়ার পর হালকা পানি দেয়া উচিত। তাহলে সার থেকে খাদ্য উপাদান গাছ সহজেই গ্রহণ করতে পারবে।

ছক: চারা লাগানোর পর থেকে উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত গাছ প্রতি জৈব সারের পরিমাণ (কেজিতে)

গাছের আকৃতিরোপণের এক বছর পর গোবর সারপ্রতি বছর বাড়াতে হবে গবর সার১৫ বছর পর গোবর সার
১। বড় গাছ১০১০২৫
২। মাঝারি গাছ২০
৩। ছোট গাছ--
৪। খুব ছোট গাছ--

সাধারণত চারা রোপণের পূর্বে গর্ভে যে পরিমাণ সার দেয়া হয় তার অর্ধেক পরিমাণ সার বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে বাকি অর্ধেক দিতে হবে। পরবর্তীতে চারার বৃদ্ধির সাথে সাথে বৎসরওয়ারী সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে । এভাবে চারা লাগানার পর হতে ফলবান হওয়া পর্যন্ত যত্ন নিতে হবে, যাতে গাছ সুস্থ, সবল ও সতেজ থাকে।

সার প্রয়োগের সময় চারার একেবারে গোড়ায় সার দেওয়া উচিত নয়। চারা বা ছোট গাছের ক্ষেত্রে চারার গোড়া বা কমপক্ষে ০.৫ মিটার ও বড় গাছের ক্ষেত্রে ১ মিটার দূর দিয়ে সার ব্যবহার করতে হবে। তবে সাধারণত চারা পাতা যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে ঠিক ততদূর পর্যন্ত দূর দিয়ে সার দিতে হবে । কারণ পাতার বিস্তৃতির সাথে সাথে শিকড়ের বিস্তৃতির একটা সম্পর্ক আছে । শুধু মাটির উপর সার দিলে সারের অপচয় হবে । তাই দুপুর বেলায় যত গাছের ছায়া পড়ে ততদূর দিয়ে বৃত্তাকারে দাগ দিয়ে নিয়ে সেটুকু স্থানের মাটি আলগা করতে হবে । মাটি আলগা করার সময় কোদালন বা খুরপি ব্যবহার করতে হবে । চারার চারিদিকে বৃত্তাকারভাবে ঘুরে ঘুরে মাটি আলগা করতে হবে । এতে চারার শিকড় কম কাটার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়া স্থানে স্থানে গর্ত করে বা চিকন চিকন নালা কেটে রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে টি এসপির পরিবর্তে হাড়ের গুড়া সার এবং এমপির পরিবর্তে ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে এক্ষেত্রে টিএসপি সার যে পরিমাণ ব্যবহার করা হয় তার দ্বিগুণ পরিমাণ হাড়ের গুড়া সার ব্যবহার করতে হবে । আর এমপি সার যে পরিমান ব্যবহার করা হয় তার আটগুন পরিমান ছাই ব্যবহার করতে হবে । সারের মোট পরিমাণ কে দুই ভাগে ভাগ করে একভাগ গ্রীষ্মের শুরুতে এবং একভাগ বর্ষার শেষে প্রয়োগ করা ভালো ।

ছক: চারা লাগানোর পর থেকে উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত গাছপ্রতি রাসায়নিক সারের পরিমাণ (গ্রাম) ।

ইউ = ইউরিয়া, টিএসপি = ট্রিপল সুপার ফসফেট এমওপি মিউরিয়েট অব পটাশ

অঙ্গ ছাঁটাই: বেশির ভাগ বৃক্ষজাতীয় ফল গাছের চারা অবস্থায় কিছু কিছু অঙ্গা ছাঁটাই করার প্রয়াজন হয় । চারা অবস্থায় ছাঁটাই করা হলে চাহিদা মোতাবেক গাছের আকৃতি সুগঠিত ও সুন্দর করা যেতে পারে । কলমের চারার ক্ষেত্রে অঙ্গ ছাঁটাই বিশেষভাবে উপকারী । অনেক সময় বয়স্ক গাছের অঙ্গও ছাটাই করার প্রয়োজন পড়ে । যেমন কুল, পেয়ারা, লিচু, কাঁঠাল, গাছ এর উপযুক্ত উদাহরণ । মূলত অঙ্গ ছাঁটাই বলতে গাছের অপ্রয়োজনীয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে গাছ বড় হলে সমস্যা হতে পারে এমন অংশ কেটে বাদ দেওয়াকে বুঝায় । অঙ্গা ছাঁটাই করা হলে ফলন বাড়ে এবং গাছকে সুন্দর দেখায় । ঘটাই এর সময় চারা গাছের ছোট ছোট অংশ/ডালপালা হেঁটে ছোট করে দেওয়া হয় । কোন গাছের একই সাইজের দুটো ডালের মধ্যে যদি একটি অপেক্ষা আরেকটি বেশি ছাঁটাই করা হয় তাহলে বেশি ছাঁটাই করা ডালটি কম বাড়ে! গাছের আকৃতি সুন্দর ও ফল বেশি হওয়ার জন্য অনেক সময় ডালপালা ছাঁটাই করে কমিয়ে দেওয়া হয় । ছাঁটাই এর সাথে ফল উৎপাদনের সরাসরি সংযোগ আছে । অনেক ফলবতী গাছে বেশি ছাঁটাই করা হলে দীর্ঘদিন ধরে ফলন কম হবে । তাই গাছ বিশেষে সতর্কতার সাথে সঠিকভাবে ছাঁটাই করতে হবে । লতানো গাছে ফলন বৃদ্ধি ও সঠিক আকার দেওয়ার জন্য ঘটাই অপরিহার্য । আঙ্গুরের মত লতানো ফল গাছকে ছেটে মাচায় দিলে বেশি ফলন দেয়। এছাড়া অনেক সময় বড় গাছের ডাল ঘেঁটে ছোট করে রাখলে ফল পাড়তে, যত্ন নিতে ও মাধ্যমিক পরিচর্যার সুবিধা হয় । কিছু কিছু চারা গাছ লাগানোর পর প্রধান কাণ্ড বা ডগা তাড়াতাড়ি বেড়ে লম্বা হয় এবং ডালপালা কম হয় বা আদৌ হয় না । এসব ক্ষেত্রে প্রধান কাণ্ড বা ডগা কেটে দিলে ডালপালা গজিয়ে ঝাঁকড়া হয়, যা ফলন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক । গাছের ভারসাম্য রক্ষার জন্য চারদিকে সমদূরত্বে তিন থেকে পাঁচটি ডাল রাখলে ভালো হয় । বড় গাছের ভেতরের ছোট ছোট ডালে ফল কম হয় এবং গাছের ভিতরে বাতাস ও রোদ চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে । গাছের কাণ্ড মজবুত করা এবং ফলন বাড়ানোর জন্য চারা লাগানোর দুই তিন বছরের মধ্যে প্রধান কাণ্ডের সাথে পাশের ডালের বিন্যাস ঠিক করে হেঁটে দিতে হয় । যেমন- রোগাক্রান্ত ও দুর্বল ডাল সব সময় হেঁটে দিতে হয় । কেননা রোগাক্রান্ত ডাল থেকে সব সময় রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ।

মুল ছাঁটাই: কখনও কখনও গাছের মূল ছাঁটাই করে উপকার পাওয়া যায় । বর্ষার শেষে গাছের চারিপাশে মাটি চাষ করে বা কোপায়ে দিলে মূল ছাঁটাই এর কাজ অনেকটা হয়ে যায় । গাছের গোড়া হতে ১ থেকে ৩ মিটার দূর দিয়ে হালকা করে নালা কাটা হলে মুল ছাঁটাই হয়। নালাটি গাছের চারিপাশ দিয়ে সম্পূর্ণ চক্রাকারে- বর্গাকারে, এক চতুর্থাংশ চক্রাকারে বা বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের, প্রস্থের ও বিভিন্ন গভীরতার হতে পারে । এছাড়া গাছের গোড়া হতে কিছু । দূরে স্থানে স্থানে গর্ত করলেও মূল ছাঁটাই এর কাজ হয় । যে সব গাছের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি সে সব গাছের মুল ছাঁটাই করা হলে ফল বেশি ধরতে সাহায্য করে ।

স্থানান্তরকালীন পাতা ছাঁটাই- বীজতলা বা হাপর হতে চারা স্থানান্তরের সময় চারার মুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এতে মূলের সাহায্যে রস গ্রহন ও পাতার সাহায্যে প্রশ্বেদনের সামর্থ থাকে না এবং চারা মারা যেতে পারে । এ জন্য বীজতলা হতে চারা উঠানোর আগেই কিছু পাতা হেঁটে কমায়ে দিলে গাছ বাঁচানো সহজ হয় ।

ফুল ও ফল পাতাল করা: গাছে খুব বেশি ফুল আসলে কিছু কিছু ফুল ভেঙে দিতে হয় । তাতে অন্যান্য ফুলে পরিপূর্ণতা লাভে সহায়ক হয় । অতি ছোট গাছে ফুল হলে তা ভেঙ্গে না দিলে ফল হলে গাছ দুর্বল হয় । অনেক সময় গাছে বেশি ফল ধরলে ফলের আকার ছোট হয় এবং গুনগত মানও কমে যায় । এক্ষেত্রে ফল কিছু কিছু পাতলা করে দিলে অন্যান্য ফলগুলো আকারে বড় হয় এবং মানসম্মত গুণাগুণ বজায় থাকে।

Content added By

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১ । আমাদের দেশে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় কখন ? 

২। চারা রোপণের পর ছায়া প্রদান করা হয় কেন ? 

৩। চারা গাছের ডাল পালা কেন হেঁটে দিতে হয় ? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১ । বাগানে কী ভাবে চারা/কলম রোপণ করতে হয় আলোচনা কর । 

২ । বীজ তলা থেকে চারা/কলম উত্তোলনের পদ্ধতি বর্ণনা কর 

৩ । বীজ রোপণের পর থেকে চারা তালোর আগ পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ । 

৪ । বাগানে রোপণের পূর্বে ফলের চারা/কলমের কষ্ট সহিষ্ণুতা বাড়ার কৌশল বর্ণনা কর । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১। ফল বাগানে চারা রোপণ ও পরবর্তী পরিচর্যাসমূহ বর্ণনা কর । 

২ । বীজতলা থেকে ফলের চারা/কলম উত্তোলনের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় ব্যাখ্যা কর । 

৩ । বীজ তলা থেকে চারা/কলম উঠানো এবং কষ্টসহিষ্ণুতা বাড়ানোর জন্য করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ কর ।

Content added By
Promotion